জনজীবনতথ্য

কেন গরম লাগে?

নয়ন আসাদ: মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বাইরের তাপমাত্রা আরো বেশি হলে গরম লাগা খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু অধিকাংশ সময়ই কিন্তু আমাদের দেহের তাপমাত্রা কিন্তু বাইরের চেয়েও বেশি থাকে। যেমন তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রির আশেপাশে আসলেই আমরা গরম অনুভব করি যেখানে মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮ ডিগ্রি ফারেন হাইট। তাহলে প্রশ্ন জাগে বাইরের চেয়ে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেশি হলেও কেন গরম লাগে?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের জানতে হবে শরীরের তাপ উৎপাদনের কৌশল সম্পর্কে।

আমরা জানি আমাদের দেহ প্রতিনিয়তই তাপ উৎপাদন করে চলছে। আমরা চুপ থাকলেও আমাদের দেহ কখনোই চুপ থাকেনা। নানা প্রক্রিয়া ও বিক্রিয়ায় তাপ উৎপাদন করে সচল রাখে আমাদের। দেহের উৎপাদিত এই তাপ নিয়ন্ত্রন করার জন্য দেহে কিন্তু আছে অনেক প্রক্রিয়া।

প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেহকে সবসময় অতিরুক্ত কিছু তাপ বের করে দিতে হয়। দেহ থেকে তাপ বাইরে বের করে দিতে চারটি পদ্ধতি কাজে লাগে। সেগুলো হচ্ছে পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ এবং স্বতঃবাষ্পীভবন।

এর মধ্যে দেহের তাপমাত্রা বাইরে বের হয়ে যায় সাধারণত বিকিরন পদ্ধতিতে। শরীর ও চারপাশের বায়ুর মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকায় শরীর থেকে অতিরুক্ত তাপ বায়ুতে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু এদিকে বায়ু কিন্তু আবার খুব বেশি তাপ পরিবহন করতে পারে না।

কাজেই যখন মানুষ স্থির বায়ুতে অবস্থান করে তখন তার চারপাশের বায়ু তার দেহের তাপে আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং একসময় তা দেহের তাপমাত্রার সমান বা কাছাকাছি হয়ে যায়।

বায়ুর তাপমাত্রা দেহের তাপমাত্রার কাছে চলে গেলে তখন আর দেহের তাপ বাইরে বের হতে পারে না। কারণ তাপ পরিবাহিত হতে হলে দুটি বস্তুর মাঝে অবশ্যই তাপমাত্রার পার্থক্য থাকতে হয়। মানে একটির চেয়ে অন্যটির তাপমাত্রা অবশ্যই কম-বেশি থাকতেই হবে।

এর ফলে যে মুহুর্তে শরীর থেকে তাপ বাইরে বাইরে বের হতে পারে না তখনই শুরু হয় আমাদের গরম লাগা।

শরীর এবার কাজে লাগায় আরেকটি কৌশল। সেটা হচ্ছে স্বত:বাস্পীভবন। যাকে আমরা বলি ঘাম। এই ঘাম কিছুটা তাপ নিয়ে বাষ্পে রুপান্তরিত হয় আর আমাদের শরীর এই কৌশলে তাপ ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের রক্ষা করে।

তাহলে প্রশ্ন জাগে ফ্যান কিভাবে এই গরম লাগা কমিয়ে দেয়?

এখানেই মজার ব্যাপারটি ঘটে থাকে। ফ্যান যে বাতাস দেয় তা কিন্তু বাইরে থেকে আনে না। ফ্যানের বাতাস কেবল আমাদের দেহের চারপাশের উপ্তত্ত বায়ুকে নাড়াচাড়া করায়। যাতে দেহের তাপে চারপাশের উত্তপ্ত বায়ু চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এতে নতুন বায়ু দেহের সংস্পর্শে আসে এবং দেহের তাপ নতুন করে গ্রহন করে আবার দুরে সরে যায়। এভাবে বারংবার ঘটতে থাকে। যার ফলে আমাদের গরম লাগার অনুভুতি কমে যায়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *