সাহিত্য

বাতাসের মুখে লাগাম দিয়ে – আল মাহমুদ

ইচ্ছে ছিল দেখতে দেখতে যাওয়ার। আমার কৈশোরের পথও ছিল ছায়াশীতল।
বৃক্ষ ও পাখির অরণ্যের একঘেয়েমি পেরিয়েই যে নদী
তা আমি জানতাম। যেমন জানে ডিমের ভেতরকার পাখির কুসুম।
চিরকাল ভেবে এসেছি একটা নদীর লেজ ধরতে পারলেই
আমার গন্তব্যে অর্থাৎ মস্তকে গিয়ে দাঁড়াবো। একেবারে ফণার ওপর।
এক মধ্য দুপুরের নদী যেখানে বাঁক ধরেছে সেখানে পৌঁছেই
দেখি ডাঙা জুড়ে কেবল কবরের সারি। সমাধিলিপিহীন
শত শত গর্ত।
শকুনীরা ডানা খুলে রোদ পোয়াচ্ছে। এখানেই তো আমার
থমকে দাঁড়াবার পালা। যাদের সাথে কিংবা সামান্য আগে-পরে
আমার যাত্রা, তারাই এখানে শুয়ে। আমার সালাম নিরুত্তর।
তবুও আমার বুক কাঁপলো। কারণ বাতাসে ভাসছে
শহীদের কাফনে ছড়ানো গোলাপের নির্যাস। যা কেবল
সহযোদ্ধার নাসিকা ছাড়া কোনো বেইমানের নাসারন্ধ্রে
ঢোকার কথা নয়।
আমার ভেলা আবার ভাসলো। আমি নামহীন সমাধি প্রান্তর
পেছনে ফেলে আমার পতাকা উড়িয়ে দিলাম।

সাতাশটি বছর বাতাসের মুখে লাগাম দিয়ে যেখানে এসেছি
সেখানে যোদ্ধার মুখোশপরা শেয়ালের হুক্কাহুয়ায়
নগরবাসী নিথর।
অথচ এর প্রতিটি তোরণ, মিনার ও স্মরণসৌধ আমার চেনা।
পান্থশালাগুলো গিজ গিজ করছে মুখোশধারী প্রমোদলোভীদের ভিড়ে
কবিদের পচা পদ্যে কেবল ভাঁড়ামি ও হালুয়া রুটির গন্ধ।
মানচিত্রের বেসাতকারীদের গায়ে পণ্ডিত্যের পোশাক। আর
শীতের পাখি বিক্রেতার মত কে যেন বাংলাদেশকে হাত বাঁধা
হাঁসের মত ঝুলিয়ে হাঁক দিচ্ছে, সস্তা, খুব সস্তা, আসুন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *